AsiaCalling

Home সংবাদ অন্যান্য ভুটান সুখকে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পরিমাপক হিসাবে দেখার সুপারিশ করেছে

ভুটান সুখকে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পরিমাপক হিসাবে দেখার সুপারিশ করেছে

ইমেইল প্রিন্ট পিডিএফ

Download এ সপ্তাহে জাতিসংঘ প্রথমবারের মতো নিউইয়র্ক সদর দপ্তরে সুখ এবং ভালো থাকার উপর কনফারেন্সের আয়োজন করে। জননীতির অংশ হিসাবে সুখের গুরুত্বকে তুলে ধরতে এ কনফারেন্সে শত শত সরকারি প্রতিনিধি, শিক্ষাবিদ এবং সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা জড়ো হয়েছিলেন।
এই কনফারেন্সের স্মারক হিসাবে জাতিসংঘ বিশ্ব সুখ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এতে বিশ্বজুড়ে সরকারি উদ্যোগের ধরণ হিসাবে সুখের প্রতি অধিক মনোযোগের চাহিদার কথা উঠে এসেছে। ভুটান এ ধারণার প্রবর্তক হিসাবে পথ দেখিয়েছে। দেশটি কয়েক দশক ধরে গড় জাতীয় সুখ সূচককে উন্নয়নের পরিমাপক হিসাবে ব্যবহার করে আসছে।
রন করবেনের প্রতিবেদন।


ভুটানের প্রধানমন্ত্রী জিগ্মি থিনলে জাতিসংঘের প্রতি সার্বিক উন্নয়নের গুরুত্বের প্রতি জোর দেন- যার মানে হচ্ছে হিসাবের মধ্যে মানুষের সুখ ও ভালো থাকাকে অন্তর্ভুক্ত করা।
“বিশ্বের জনসংখ্যার একটি ক্রমবর্ধমান অংশ। বুদ্ধিজীবী, গবেষক, বিজ্ঞানী ও অন্যরা একটি বিকল্প উন্নয়ন ধারণার খোঁজ করছেন। ভুটানের প্রস্তাবিত মানুষের সুখ ও ভালো থাকা জাতিসংঘের প্রস্তাব হিসাবে পাশ হওয়ায় আমরা ব্যাপকভাবে উৎসাহিত হয়েছি। প্রস্তাবটি সর্বসম্মতিক্রমে পাশ হওয়ায় আমরা বিস্ময়মিশ্রিত আনন্দ লাভ করেছি।”

গত বছর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ একটি সিদ্ধান্ত নেয় যে একটি দেশের জনগণের সুখ শুধু অর্থনৈতিক উন্নতির আর্থিক সূচক দিয়ে পরিমাপ করা যায়না। এ ধারণার জন্ম ভুটানে। ১৯৭০ এর দশকের শুরুর দিকে তারা উন্নয়নের মাপকাঠি হিসাবে গড় জাতীয় সুখ সূচকের ব্যবহার শুরু করে। এ সূচকের মধ্যে রয়েছে সুশাসন, নিজস্ব উন্নয়ন, হিমালয়ের সংস্কৃতিকে রক্ষা করা ও টিকিয়ে রাখা।
কামা শীতিম ভুটানের গড় জাতীয় সুখ কমিশনের সচিব। তিনি এ পর��মাপের প্রধান নীতিগুলি জানালেন।
“উন্নয়নের এ ধারণায় আমরা বস্তুগত ও অবস্তুগতের যেমন আধ্যাত্মিক, সাংস্কৃতিক দিক ও সমাজে ব্যক্তিমানুষের প্রয়োজনের একটি ভারসাম্য আনার চেষ্টা করেছি। এটা খুব সাধারণ একটি বিশ্বাসের উপর ভিত্তি করে করা হয়েছে যে সবকিছুর পরেও মানুষ আসলে একটি অর্থপূর্ণ জীবনযাপন করতে চায়।”

অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ঐতিহ্যবাহী পরিমাপকগুলো যেমন গড় জাতীয় ও স্থানীয় উৎপাদন সবই আয়ের সাথে সংযুক্ত- । কিন্তু অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সাথে দূষণ, সামাজিক স্থানান্তর ও পরিবেশের ক্ষয়ক্ষতিও জড়িত।
কামা বলেন এ কারণেই ভুটানের পদ্ধতিটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিকল্প।
“আসলে আমরা উন্নয়নের ব্যাপারে যেভাবে কাজ করছি বা শুধুমাত্র জিডিপি দিয়ে যে ধোঁয়াশাময় প্রবৃদ্ধির কথা বলছি তা আসলে সমাধানের থেকে বেশি সমস্যার জন্ম দিচ্ছে। আমরা বলছি না যে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা বা দারিদ্র্য দূর করা ভালো না, অবশ্যই এগুলো মূল লক্ষ্য। আমাদের মনে হয় উন্নয়ন টেকসই হওয়াটা গুরুত্বপূর্ণ।”

ভারতের কাছে জলবিদ্যুৎ বিক্রি করা ভুটানের বৈদেশিক মুদ্রার প্রধান উৎস। এর পরেই রয়েছে পর্যটন, যেখানে লক্ষ্য হচ্ছে সীমিত সংখ্যার পর্যটকদের আকৃষ্ট করা। সব পর্যটককেই ভূটানে প্রতিদিন ২৫০ ডলার করে খরচ করতে হয়। পর্যটন পরামর্শক ইসাবেল সেবাস্তিন বলেন সরকারের পরিবেশ ও স্থানীয় সংস্কৃতিকে রক্ষার অঙ্গীকারের অংশ এটা।
“এখানকার নীতিনির্ধারকরা এবং বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী গড় জাতীয় সুখকে ভুটানের উন্নয়নের প্রধান দর্শন হিসাবে স্থাপন করার ব্যাপারে অঙ্গীকারাবদ্ধ। কাজেই আমার বিশ্বাস ভুটানের ব্যাপারগুলো অন্যদের মতো হবেনা। এখানকার নেতাদের একটি মহান দর্শন আছে যেটা আসলে আপনি বিশ্বের আর কোথাও পাবেন না।”

কিন্তু প্রথাগত জিডিপির বিচারেও ভুটানের অর্থনীতি এগিয়ে যাচ্ছে। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে এ অর্থনীতি গড়ে সাত শতাংশ হারে বেড়েছে। পাঁচ বছর আগে যেখানে মাথাপিছু আয় ১৭০০ মার্কিন ডলারের কিছু বেশি ছিল সেখানে আজ সেটা ২০০০ ডলারেরও বেশি। আগামী তিন বছরের মধ্যে জাতিসংঘ সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্য পূরণ করার কারনে ভুটান প্রশংসিত হয়েছে।
দর্জি ছদেন ভুটানে জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির দারিদ্র্য বিভাগের প্রধান। তিনি বলেন,
“জিএনএইচ এর ভেতরে রয়েছে পরিবেশের বিষয়, জনপদের সামাজিক ধরণ, সার্বিক নিরীক্ষা ও সর্বোপরি জনপদের প্রাণোচ্ছলতা। এটাই একমাত্র অগ্রাধিকারের বিষয় নয় কিন্তু এটা আসলেই বিষয়টার প্রতি সম্পূর্ণভাবে দৃষ্টি দেওয়া, সবরকম দিক থেকে দেখা।”
কিন্তু ভুটানও সামাজিক সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছে, খাদ্য নিরাপত্তা ও যুবকদের কর্মহীনতার মতো গুরুতর ব্যাপারে। অনেক এলাকাতে উর্বর জমিও সীমিত। কিন্তু গড় জাতীয় সুখ কাহিনীর এটাই একমাত্র দিক নয়। এশিয়ার সুখীতম জাতি দাবি করা হলেও মানবাধিকার লঙ্ঘন এখানে একটি বড় বিষয়। গড় জাতীয় সুখ সূচক প্রবর্তনের এক দশক পর সরকার ‘এক জাতি, এক মানুষ’ নামে একটি প্রচারণা শুরু করে। তারা ভুটানি নেপালি ভাষায় কথা বলা লোহট সাম্পাসদের একটি বড় অংশের নাগরিকত্ব কেড়ে নেয়। এ প্রচারণার ফলে তাদের হয়রানি ও গ্রেফতার করা হয় এবং তাদের বাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়। অনেকে নেপালে পালিয়ে যান। এখন এক লাখেরও বেশি লোহট সাম্পাস সেখানে দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে শরণার্থী শিবিরে কাটিয়েছে। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের মতে এটা বিশ্বের সবচেয়ে অবহেলিত শরণার্থী সমস্যা। গড় জাতীয় সুখ একটি সমন্বিত পরিমাপক হতে পারে, শুধু যদি এর ভেতরে সব মানুষকে ধরা হয়।


সর্বশেষ আপডেট ( সোমবার, 09 এপ্রিল 2012 09:52 )  

Add comment


Security code
Refresh

Search